সাল ১৯৮৫ প্রধানমন্ত্রী পদে তখন রাজীব গান্ধী। ইন্দ্রাগান্ধির মৃত্যুর পর লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। সেই সময় ৫২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে পাস করা হয় দলত্যাগ বিরোধী আইন (anti defection law)। এই আইন মোতাবেক কোন দলের প্রতীকে নির্বাচিত সাংসদ বিধায়ক সেই দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিলে, তার সংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাবে। তবে তিনি যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দলটি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে সে ক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ ও বিধায়ক পদ খারিজ হবে না। সংসদীয় রাজনীতির জগতে আয়ারাম- গয়ারামের খেলা ঠেকাতেই এই আইন আনা হয়েছিল।
তবে কোন দলে নির্বাচিত সাংসদ বা বিধায়কদের এক-তৃতীয়াংশ যদি একযোগে দলবদল করেন। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে গিয়ে বিরোধী আইন প্রযোজ্য হবে না। তবে এই দলত্যাগ বিরোধী আইন এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন গরিমশি দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। অনেক ক্ষেত্রে জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। আইনসভার বিচারে নয় দলত্যেগিদের আইনসভার সদস্যপদ খারিজ হয়েছে আদালতের রায়ে।
গত ১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের বহু বিধায়ক দল ছেড়ে শাসক দলে যোগ দিয়েছেন কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে লাঘু হয়নি দলত্যাগ বিরোধী আইন। ২১ এর ভোটের আগে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক সাংসদ বিজেপিতে যোগ দেন । কিন্তু কেউ কেউ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আবার কেউ কেউ দেননি। ভোটের পর মুকুল রায় বিধায়ক পদে ইস্তফা না দিয়েই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাকে PSA চেয়ারম্যান করেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের দাবি তিনি এখনো বিজেপির বিধায়ক। তৃণমূলের ঝাণ্ডা হাতে নেন নি।
ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভায় উপস্থিত থেকেছেন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। একদিকে যেমন মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে সোচ্চার বিজেপি। তখন সুনীল মন্ডল, শিশির অধিকারীর, সংসদ পথ খারিজের দাবি তুলেছে তৃণমূল। ফলের দলত্যাগ বিরোধী আইনের কার্যকর নিয়ে শোরগোল বঙ্গ রাজনীতিতে। মুকুল রায় কে নিয়ে বিজেপি পরিষদীয় আবেদনের ভিত্তিতে ১৬ জুলাই শুনানি রাজ্য বিধানসভায় আবার তৃণমূলের আবেদনের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করছেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা ।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনা ভেবে রেখেছেন। আইন আছে, সংসদের অনুমোদনে কার্যকর হয়েছে সেই আইন। কিন্তু দেশজুড়ে সেই আইন প্রয়োগে আইনসভার চৌকাট পেরিয়ে বারবার বিচারব্যবস্থা দ্বারস্থ হতে হওয়ায় প্রশ্নের মুখে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন